অখণ্ড সংস্করণ। তিন পর্বে সম্পূর্ণ | (দ্বিতীয় পর্ব: শতধারায় বয়ে যায়) | (তৃতীয় পর্ব: উত্তাল সময়ের ইতিকথা)
পদ্মা-মেঘনা-ধলেশ্বরী-কালাবদর এবং শত জলধারায় বহমান অজস্র নদী, খালবিল, অফুরান শস্যক্ষেত্র, নানা বর্ণময় পাখি-ফুল- বৃক্ষলতা-এই সব মিলিয়ে সেদিনের পূর্ববাংলা ছিল নিসর্গের এক মায়াময় ভূখন্ড। বাতাসে বাতাসে তখন জারি-সারি-ভাটিয়ালির সুর। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক তখন বড়ই মধুর, আবিলতায় ভরে যায় নি। হিন্দু-মুসলমান, দুই সম্প্রদায় ছিল পরস্পরের পাশাপাশি। তাদের মধ্যে অনেক সময় মতান্তরও নিশ্চয়ই ঘটেছে, মনান্তরও। কিন্তু ছিল না তীব্র বিদ্বেষ। এই পটভূমিতে বিনু নামে এক বালকের বড় হয়ে ওঠা। আবহমান কালের শান্তস্নিগ্ধ রমণীয় পূর্ববাংলা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় থেকেই উত্তাল হয়ে উঠতে শুরু করে। এদেশে যুদ্ধ হয় নি; কিন্তু আমেরিকান এবং ব্রিটিশ সৈন্যে ছেয়ে গেল চারিদিক। তাদের হাত ধরে ছড়িয়ে পড়ল নানা ধরনের বিষ। এল কালোবাজারি, মজুতদারি, মানুষের তৈরি কৃত্রিম খাদ্যাভাব, দুর্ভিক্ষ, মূল্যবোধের চরম বিনাশ, লক্ষ লক্ষ মানুষের অনাহারে মৃত্যু।
যুদ্ধশেষে ইংরেজরা দু'শো বছরের ভারতীয় উপনিবেশ ছেড়ে চলে যাবে। তার আগেই আরম্ভ হল দাঙ্গা। হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে এতকালের সম্পর্ক লহমায় ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। তখন দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে শুধুই ঘৃণা, অবিশ্বাস এবং চরম শত্রুতা। বিষবাষ্পে ছেয়ে গেল দশ দিগন্ত। দাঙ্গায় খুন হল হাজার হাজার মানুষ, লুট হল অসংখ্য তরুণী। পুড়ে ছাই হল নগর-বন্দর, শত সহস্র জনপদ। তখন শুধুই হত্যা, রক্তপাত, ধর্ষণ। ভারত নামে এই দেশটি, বিশেষ করে পূর্ববাংলা যেন আদিম বর্বর যুগে ফিরে গেছে।
দাঙ্গার পরে পরেই দেশভাগ। বিনুর প্রিয় নারী ঝিনুক ধর্ষিত হয়েছে। প্রায়-অপ্রকৃতিস্থ ঝিনুককে নিয়ে লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর সঙ্গে এপারে চলে আসে বিনু। পশ্চিমবঙ্গও তখন উথালপাতাল। একদিকে জাতির জীবনে মহাসংকট, অন্যদিকে ঝিনুককে নিয়ে বিনুর ব্যক্তিজীবনে নানা অভিঘাত। এইসব নিয়ে 'কেয়াপাতার নৌকো' বিশাল পরিসরে শুধু মহাকাব্যিক উপন্যাসই নয়, বাঙালি জাতির চরম দুঃসময়ের এক মহামূল্যবান ইতিহাসও।
-----------***********************------------
প্রফুল্ল রায়ের জন্ম ১১ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৪। আদি নিবাস অখন্ড বাংলার ঢাকা জেলায়, বিক্রমপুরের আটপাড়ায়। বাল্য ও কৈশোর কেটেছে পূর্ববঙ্গে। দেশভাগের পর স্থায়ীভাবে কলকাতায় চলে আসেন। শুরু হয় নিদারুণ জীবন সংগ্রাম।
ছোটখাটো কিছু কাজ করার পর 'যুগান্তর' পত্রিকার সাহিত্য বিভাগ 'সাময়িকী'র সম্পাদক হন। কয়েক বছর 'সংবাদ প্রতিদিন'-এর সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
একসময় সারা ভারত প্রায় পায়ে হেঁটে ঘুরে
বেড়িয়েছেন। দেশ দেখার ইচ্ছা যতটা ছিল, দেশের
পিছিয়ে-পড়া, শোষিত মানুষদের ঘনিষ্ঠভাবে জানার আগ্রহ ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি। লেখকের বিপুল অভিজ্ঞতা তাঁর সৃজনশীলতাকে সমৃদ্ধ করেছে। গল্প-সংগ্রহ, উপন্যাস, প্রবন্ধ এবং কিশোরদের জন্য নানা লেখালেখি-সব মিলিয়ে লেখকের গ্রন্থসংখ্যা দেড়শো'র মতো। প্রথম গল্প 'মাঝি' ও প্রথম উপন্যাস 'পূর্বপার্বতী' প্রকাশিত হয়েছিল সাপ্তাহিক 'দেশ' পত্রিকায়। 'পূর্বপার্বতী', 'কেয়াপাতার নৌকো', 'শতধারায় বয়ে যায়', 'সিন্ধুপারের পাখি', 'আকাশের নীচে মানুষ', 'রামচরিত্র', 'ভাতের গন্ধ', 'মানুষের যুদ্ধ', 'শ্রেষ্ঠ গল্প' তাঁর কয়েকটি বিখ্যাত গ্রন্থ।
নানা ভারতীয় ভাষায় এবং ইংরেজিতে তাঁর বহু রচনা অনূদিত হয়েছে।
সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য 'অকাদেমি', 'বঙ্কিম', 'রামকুমার ভুয়ালকা', 'শরৎ স্মৃতি', 'পুরস্কার' ইত্যাদি অজস্র সম্মান পেয়েছেন।
তাঁর গল্প-উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে চল্লিশটির মতো ফিচার ফিল্ম, টেলিফিল্ম, টেলিসিরিয়াল। এর অনেকগুলি শ্রেষ্ঠ জাতীয় পুরস্কারে সম্মানিত। প্রফুল্ল রায়ের জন্ম ১১ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৪। আদি নিবাস অখন্ড বাংলার ঢাকা জেলায়, বিক্রমপুরের আটপাড়ায়। বাল্য ও কৈশোর কেটেছে পূর্ববঙ্গে। দেশভাগের পর স্থায়ীভাবে কলকাতায় চলে আসেন। শুরু হয় নিদারুণ জীবন সংগ্রাম।
ছোটখাটো কিছু কাজ করার পর 'যুগান্তর' পত্রিকার সাহিত্য বিভাগ 'সাময়িকী'র সম্পাদক হন। কয়েক বছর 'সংবাদ প্রতিদিন'-এর সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
একসময় সারা ভারত প্রায় পায়ে হেঁটে ঘুরে
বেড়িয়েছেন। দেশ দেখার ইচ্ছা যতটা ছিল, দেশের
পিছিয়ে-পড়া, শোষিত মানুষদের ঘনিষ্ঠভাবে জানার আগ্রহ ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি। লেখকের বিপুল অভিজ্ঞতা তাঁর সৃজনশীলতাকে সমৃদ্ধ করেছে। গল্প-সংগ্রহ, উপন্যাস, প্রবন্ধ এবং কিশোরদের জন্য নানা লেখালেখি-সব মিলিয়ে লেখকের গ্রন্থসংখ্যা দেড়শো'র মতো। প্রথম গল্প 'মাঝি' ও প্রথম উপন্যাস 'পূর্বপার্বতী' প্রকাশিত হয়েছিল সাপ্তাহিক 'দেশ' পত্রিকায়। 'পূর্বপার্বতী', 'কেয়াপাতার নৌকো', 'শতধারায় বয়ে যায়', 'সিন্ধুপারের পাখি', 'আকাশের নীচে মানুষ', 'রামচরিত্র', 'ভাতের গন্ধ', 'মানুষের যুদ্ধ', 'শ্রেষ্ঠ গল্প' তাঁর কয়েকটি বিখ্যাত গ্রন্থ।
নানা ভারতীয় ভাষায় এবং ইংরেজিতে তাঁর বহু রচনা অনূদিত হয়েছে।
সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য 'অকাদেমি', 'বঙ্কিম', 'রামকুমার ভুয়ালকা', 'শরৎ স্মৃতি', 'পুরস্কার' ইত্যাদি অজস্র সম্মান পেয়েছেন।
তাঁর গল্প-উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে চল্লিশটির মতো ফিচার ফিল্ম, টেলিফিল্ম, টেলিসিরিয়াল। এর অনেকগুলি শ্রেষ্ঠ জাতীয় পুরস্কারে সম্মানিত।